কাজল দাশের কবিতা

.

এখানে চলে এসো, ক্লদিয়া

অভিশপ্ত স্যান ফার্নান্দো ভ্যালি ছেড়ে

আমার বাহুবন্ধনে

বের হয়ে যেতে পারো চকিতে

বিনা নোটিশে

নিশ্চয়তা দিচ্ছি

তোমাকে আর শুনতে হবে না

অ্যাইমি মানের গান

তোমার চোখ দেখে কেউ বলবে না

“আই ক্যান টেল বাই ইওর আইজ

দ্যাট ইউ হ্যাভ বীন ক্রাইং ফরেভার”

যদি কেঁদে ফেলো

শোনাবো চন্দ্রবিন্দুর গান

ঘুমানোর আগে শোনাবো

শকুন্তলা আর দুষ্মন্তের গল্প

তুমি চাইলে করে নেব

অ্যানিমে দেখার অভ্যেস

ভয়ে ঘুম ভাঙলে করে দেব

তোমার প্রিয় খাবার

ব্রাউনি উইথ আইসক্রিম

দেখাব খেয়ানৌকা চলে গেলে

কীভাবে পাড়ের দিকে ধেয়ে আসে ঢেউ

কীভাবে পাতার ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যায়

তিনখানা চাঁদ

আরো দেখাব বৃষ্টির পর

রাস্তার জমাট পানিতে

আলোর পেটে আলোর মিশে যাওয়া

চলে এসো ক্লদিয়া

শহরের সব পুরনো বাড়ির সামনে

তোমার ছবি তুলে দেব

হাঁটতে হাঁটতে বলবো

জন এলিয়ার কবিতা

সব গলির মুখে

সেঁটে দেব তোমার ঘ্রাণ

প্রতিদিন এনে দেব ফুল

আমি শিখে নেব তুমি

কখন সিগারেট খেতে চাও

কখন চুমু

ক্লদিয়া,

তোমার কথা শুনবো

কোনো পাল্টা প্রশ্ন ছাড়া

যদি কিন্তু ছাড়া

তুমি মিথ্যা ভয় পাও

বেশি ভয় পাও মানুষ

এখানে এলে

সবাই তোমাকে গেয়ে শোনাবে

“তুম আপনা রাঞ্জ ও ঘাম”

দেরি কেন ক্লদিয়া?

 

 

 

.

উলা গেলো

নভেম্বর এলো

ত্রস্ত পায়ে শীত আসে

ধীর পায়ে কুয়াশা

ছবি সব ঢেকে যায়

ঝাপসা হয় অক্ষর।

একটা স্যাঁতসেঁতে

বদ্ধ কামরায়

একটা অ্যাশট্রে

তেপায়া চেয়ার

কিছু অনাহূত ফিসফিসানি

ফ্ল্যাশলাইট, রাহুর ত্রাস

নেইম অব দ্য রোজ

বলে যায়

তোমাকে বিষাদ বলে জানি।

স্টেশনে বাজারে

চার রাস্তার মোড়ে

দেয়ালে, পোস্টারে

মাত্র ভেড়ানো নৌকায়

মনোক্রোম্যাটিক সন্ধ্যায়

কারা যেনো ডেকে যায় ডেকে যায়

তোমার গল্প বলে।

ওরা কি জানে

তুমি ভিড়ে একা হয়ে যাও

ব্রাউনির সাথে কি নাও

তরকারিতে কতটুকু ঝাল খাও

কোন গান তোমাকে হন্তদন্ত করে

টোস্ট বিস্কুটে মাথাব্যথা বাড়ে?

ঘুম ভেঙে গেলে

আম্মাকে কি ডাকো

রাস্তাার কোনদিকে হাঁটো

হাতব্যাগে কী কী রাখো

এখন কোন নদীকে

তোমার দুঃখ বলো

প্রেমিক কষ্ট দিলে

বুকে দলা পাকে?

ঠোঁট কাঁপে

কথা কাটাকাটি হয়ে গেলে?

জাপটে ধরো

যেভাবে বিধবা ধরে

সবেধন নীলমণিকে?

নদী পয়স্তি অঞ্চলের

কংক্রিটের ব্লক

কিংবা অনাথের শীতপোশাকে

তোমাকে দেখার কথা বলে কেউ?

নিদ্রাহীন ফুলের নাম

তোমার নামে দেয় মাঝরাত্তিরে?

কেউ কি বলে আর

তোমাকে দেখে ফেললে

দরিয়া দেখা হয়

তুচ্ছ হয় বাকি সব

জলাধার?

 

 

 

.

দরজায় যখন তোমার পায়ের আওয়াজ

আর ফিসফিসানি আইতো

তহন সব কথা আমার হয় নাই কওয়া

তাইলে কি আর এহন চিক্কুর পারা লাগত

ন্যাপকিনে আঁকা গোলাপ, গ্যাসফিল্ডে

রাইখা আসা তোমার অ্যাপেক্স জুতার ছাপ

ঘুম ভাঙলে টাইন্না ধরা

আমার খসখইস্যা হাত

কাজলে ল্যাপ্টানো চোখ, তোমার হরিণের মাংসরাঙা ঠোঁট

বক্ষে বাঁকানো চুল, তোমার কিশোরী আঙুল

বক্ষভাগের তিল, আর তাদের

সম্মিলিত ত্রিভুজ

 

ঘামের ঘ্রাণের দেয়া নেয়ার

মওসুম যহন আছিল

সব আমার হয় নাই শেঁাকা

সাধ রইয়া গেল

শহরের সব তিনফুটি গলির আঘ্রাণ

লইয়া তুমি মন্দিরে আইসা দাঁড়াইতা

কইতাম দেবী বলে তোমারে জানি

ভেতরের মূর্তির জায়গায় তুমিই নাহয় বসতা

এহনো আমার মাথায় দুই দ্বিগুণে ছয় হয়

তিন দ্বিগুণে নয়

সব ভয়, সংশয় চাপায় দিয়া যহন শেষবারে ডাকলা

এই জন্মের লাইগা হইলো না কওয়া

তুমি আসলেই গিলেত্তা মাসিনার মতো হাঁটতা

 

তিস্তা, তুমি আন্ধাইরে ঘুমাইতে

পারতা না

সেসব না ঘুমাইন্না রাতের হিসাব

আমি আর রাখতে পারলাম না

 

ঐ গাঙের কথা মনে আছে কি?

চিনাইছিলেন নাহিদের আম্মা

সোমবার দিন গেছিলাম আবার

ইচ্ছা অইলো তারে তোমার নামে ডাকি

একটা একলা গাভী কয়, তোর

অঙ্কে ভুল, সব ভুল, হিসাবের গরমিল

একটা কাক, তেপায়া চেয়ার

তোমার অপেক্ষায়, অপেক্ষা ডিঙির

 

আড়াই বৎসর ধইরা বারান্দায় আমি

চড়াইরে চাল ছিটায়া দেই

ওরা এহনো আসে, আমি চাল ছিটাই

কথা কই

ইচ্ছা অয় তোমার খবর নেই

বাইশখানা চড়াই আমার চউখের দিকে তাকায়

খানিক সব চুপ, শ্বাসের আওয়াজ নাই

পয়লা কথায় আমারে ওরা তোমার ব্যথা জিগায়

 

আইজ রাইতে জানলা খুলছি Ñ

দেহি অযুত—নিযুত আলো

হঠাৎ মনে অইলো জোনাকি

পরে ধাঁধা লাগলো

জোনাকি নাকি তুমি?

 

এক সন্ধ্যায় তোমার গন্ধ মাখা

গলি ঘুপচি ধইরা হাঁটতাছি

তোমার পায়ের ছাপ

আর ধুলাবালি মাখতাছি

একটা ছায়া হাজির হয়

যেইডারে কয় ভুইলা যাওয়া পরিচিত ছায়া

সে আইসা আমার লগে কথা কয়

বুকের দমকা হাওয়া

আমারে ধাওয়া করে

ডর লাগে, দৌড়াই, পইড়া যাই

ডাইনে বাঁয়ে তোমার বাড়িতে যাওয়ার সংকেত

হঠাৎ রোশনাই

গলির প্রান্তে কদম ফুলের ব্যারিকেড

 

আমি তোমার নাম দিমু না

জানি তুমিও দিবা না

এতো জানলা তুমি, এতো জানলাম আমি

তাও হিসাব মিললো না

এম্নে কইরা বয়স নয় থিকা

নব্বই হইবো

তোমার সতেরোই রয়া যাইব

আর রইব আমার দু’রাকাত নামাজ

পয়লা চুমার স্বাদ

আর ভাগাভাগি করা একানব্বই রাত

 

এহন চোখে আন্ধাইরও আঁটে না

শিউলি ফুটতাছে?

নাকি খালি আমিই দেহিনা

রাইত্রে আমার ঘুম আহে না

ঘুমের ভিত্রে ঐ সোনালু গাছটা দেহি

তুমি পাশের দেয়ালে বইস্যা পা নাচাও

আর কও এক্কান ছবি লও জলদি

ঘুম ভাইঙা তোমারে খুঁজি

বিছানায় তন্নতন্ন কইরা খঁুজি

খালি কি মাংস Ñ

নাকি মাংসের চাইতেও বেশি?

ব্রেসিয়ারের ভিত্রে ঢাকা স্তন

নাকি তারও ভিত্রের অঞ্চল?

 

তিস্তা এমন শেষ নাও হইতে পারতো

প্রতি আশ্বিনে আটখানা প্রদীপ

কালনীতে ভাসান যাইতো

এহন মনে আহে মা কইতো

তিন ভালা জিনিস না

তিন বার ডাকা, তিন বার পিছনে চাওয়া

তিন থুক্কু বা তিন লোকমা ভাত

এতো তিনের মাঝে

তিন বছর আগের শীতে

সিলেটের দক্ষিণে, আখালিয়ায়, তিস্তা

তোমার লগে দেখা আমার না—ই বা হইত!

তারিখ: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫

প্রকাশক: সাবিহা হক, অধ্যাপক, ইংরেজি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ

all rights reserved by - Publisher

Site By-iconAstuteHorse