বীরাঙ্গনা

তোমার দেহ,

খুব স্বাভাবিক মানবিক দেহ,

হয়ে উঠেছিল এক অত্যাশ্চর্য যুদ্ধের ময়দান

যেখানে তুমিই ছিলে একটি সেক্টর,

ও তার সেক্টর কমান্ডার।

রণাঙ্গনে

অঙ্গে অঙ্গে অঙ্গার জ্বেলে

তুমি হয়ে উঠেছিলে

এক ভয়ংকর মানবাস্ত্র,

তুমি যুদ্ধ করেছিলে

তোমার অধীনে।

তোমার যুদ্ধক্ষেত্রে ছিল না কোন মাইনফিল্ড,

বন্দুক, বেয়োনেট, গ্রেনেড, গোলাবারুদ,

কামান, বোমারু বিমান, ট্যাংক,

ডুব সাঁতরে ছুটে আসা টর্পেডো,

কিংবা সর্বধ্বংসী বিস্ফোরক,

তবুও সেখানে যুদ্ধ হয়েছে মরণপণ

যুদ্ধ হয়েছে সেই এগারোটি সেক্টরের মতই।

তুমি হয়ে উঠেছিলে

গোয়ার ঝরের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা

এক ভীষণ একরোখা তালগাছ,

প্রাণপণ আঁকড়ে ধরেছিলে স্বদেশের মাটি,

যে মাটি বহুদিন দেখেনি উদাম আকাশ।

তোমার দেহের রণাঙ্গনে

বারবার তোমার রক্ত ঝরেছে,

আর তুমি ফিরে ফিরে এসেছ বারবার,

যেভাবে ঢেউয়েরা

ফিরে ফিরে আসে সৈকতে।

শত্রুরা মারণাস্ত্র নিয়ে এসেছিল,

আর তুমি জীবণাস্ত্র,

যা দিয়ে বাঁচিয়েছিলে জীবন

আরও আরও মানুষের,

পুরুষের।

তবুও যখন আকাশ উন্মুক্ত হল

শীতার্ত উদ্যানে উদ্যানে

হেসে উঠল রঙিন ফুল

শিশু সূর্যের উচ্ছল আগমনে,

তোমার রণক্লান্ত মলিন মুখ

মুহূর্তের জন্য উজ্জ্বল হলেও

আবার ঢেকে গেল বিষাদে।

তারপর মুক্ত আকাশ ক্রমেই কলুষিত হল,

আর তোমার রণাঙ্গনের ইতিহাস

পুরুষের কৃতিত্বের একচেটিয়া অধিকারে

লীন হলে

তোমার অত্যাশ্চর্য যুদ্ধের ময়দান

হয়ে উঠল নগন্য মানবিক দেহ,

নশ্বর নারীর শরীর।

তারিখ: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫

প্রকাশক: সাবিহা হক, অধ্যাপক, ইংরেজি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ

all rights reserved by - Publisher

Site By-iconAstuteHorse