ব্লাড টেস্ট

।।কুশীলব।।

ফর্মুলা

আলু

আমজনতা

জামজনতা

কাঁঠালজনতা

আনারসজনতা

দুইজন

[ আম-জাম-কাঁঠাল-আনারসজনতা সবাই মিলে দুলে দুলে ছড়ার তালে নেচে কিছু একটা খেলছে]

এলেবেলে আঁধার এলে

বেগুন ভাজো ঠাণ্ডা তেলে

খিচুড়িতে পাঁচ ফোড়ন

খাবার পাতে বিস্ফোরণ!

বিস্ফোরণে ঝাঁটা

দিলাম হলুদ বাটা,

হলুদ বাটা চচ্চড়ি

বাঁশের ঘরে মরমরি!

বাঁশের ঘর ভাঙ্গা

কার ঠোঁট রাঙ্গা?

কলা বউয়ের টিয়ে ঠোঁট

সকল মানুষ বাঁধো জোট!

জোট ভেঙে দেয় যাদের হাত

এই খেলাতে তারাই বাদ

তাদের যদি সঙ্গে নাও

ছাড়তে হবে আমার গাঁও।

কড়াৎ কড়াৎ বজ্রপাত

দুষ্টু ছায়া হোক নিপাত!

নিপাতনে সিদ্ধ

ডাঁটাশাক বৃদ্ধ

ডাঁটাশাকের চাটনি

শাঁকচুন্নির পাটনি!

তেঁতুল গাছের কানি ভূত

খাচ্ছে এখন কলা দুধ?

কলা দুধের গন্ধে

বাদুড় ওরে সন্ধ্যে,

সন্ধ্যে বেলা হেলাফেলা

যমজ ছায়া করে খেলা!

চরকা কাটে চাঁদের বুড়ি

আঙুলে যার যাদুর তুড়ি,

তুড়ি দিলেই তালগাছ

গাছে উঠলে নেই কাজ!

‘নেই কাজ তো খই ভাঁজ’

তালগাছটা দৈত্য আজ

ঝড়ের রাতে পড়লে বাজ!

 গাছটা তবু আমার আজ?

আলী কালী মন্ত্র গাও

কলা পাতায় নৌকো বাও!

কলার পাতায় বিনুনি

বাপের জন্মে শুনিনি!

কাঁঠাল পাতা ছাগল খায়

এই কবিতা কোথায় যায়?

এ কবিতার হুঁশ নাই

কবির মাথা ঠিক নাই!

ঠিক নাই তো কই যাই

যেই দেশেতে মানুষ নাই!

মানুষ মানুষ বাধুক জোট

কলা বউয়ের রঙিন ঠোঁট!

সকাল বেলা ডাকুক কাক

দুষ্টু ছায়া নিপাত যাক!

নিপাতনে নিম পাতা

 কেঁচোর না কি নাই মাথা?

থাকলে থকুক আমার কি

কাঠবিড়ালি আমার ঝি!

[সার বেঁধে সবাই বের হয়ে যায়]

[হাতে একটা বিরাট সাইজের সিরিঞ্জ নিয়ে ফর্মুলার প্রবেশ! কাঁধের গামছা দিয়ে একটু  পরপর সিরিঞ্জের সুঁই মোছে!]

 ফর্মুলা: কই মানুষজন কই? হাতে নিয়া বইসা রইছি সুঁই! কই কই মানুষ কই? ওই ব্যাটা আলু? তুই গেলি কই? চারদিকের চিপাচাপায় না পাইলে রাস্তা থেইকা ধইরা ধইরা মানুষ আন। আমি হইলাম তেনাগো লোক! যেনারা আমারে পাঠাইছেন! মানে যারা আইজ রক্তে রক্তে বিভাজন চায়। শুনতে পাই এই দেশে মানুষে মানুষে ভীষণ পিরিত…?

[আলুর প্রবেশ, কণ্ঠে নিচের লাইনটি]

আলু: ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়…মানুষের রক্তে নাকি ধর্ম পাওয়া যায়? হে হে… কন গো বস কি কাহিনী? শুনলাম নতুন ফর্মুলা বের করছেন নাকি?

ফর্মুলা: সেই জন্যই তো ডাকা…! নিউটনের মাথায় আপেল পড়তেই উনি মধ্যাকর্ষণ আবিস্কার করলেন! আর আমার পকেটে যখন কয় লক্ষ টাকা ভইরা দিলেন তেনারা আমি করলাম মানুষের রক্ত থেইকা ধর্ম আবিস্কার…!

আলু:  বাহ! আপনে হইলেন খানদানি চিট…! এইবার লাগাইতেছেন ধর্মে ধর্মে গিট? হে হে…। আমি হইলাম আলু! মানে সব পাতে যাই! কিন্তু আপনে দেহি আমার থেইকাও উপরে দিয়া যান? যা হোক কোন পার্টি কত দিছে কন…?

ফর্মুলা: হেই চুপ চুপ …চুপ থাক বান্দর… যা যা…আগে রাস্তা থেইকা ধইরা নিয়ায়! যারে পাবি তারে আনবি বাদবিচার নাই! হাই কমান্ডের নির্দেশ…এই দেশে ছরাইতে হবে বিদ্বেষ! মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ভালো কথা না! মানুষে মানুষে হানাহানি রক্তপাত চাই! এ ছাড়া আমাগো ক্ষমতায় আসার অন্য লাইন নাই!(টেনে টেনে বলবে) ইন দ্যা ইয়ার…নাইন্টিন ফোট্টি সেভেনে কয় চুদির ভাই দ্বিজাতি তত্ত্ব নামের আবাল কিসিমের ফর্মুলায় মানুষরে মানুষ থেইকা আলাদা করছিলো…সেই ফর্মুলারই চিকণ ভার্সন আমরা আইজ আবার এপ্লাই করবো…রক্তে-রক্তে বিভাজন…! হে হে হে…

আলু: কিন্তু বস রক্তের মইধ্যে ধর্মীয় গুনাগুন থাকে কেমনে? কথাডা শুনলে মনে হয় গাঞ্জা খাইয়া ফরমুলা বানাইছেন…! সব মানুষের রক্তই তো লাল?

ফর্মুলা: আরে গাধা ওইখানেই আসল মাল…! সারা জীবন শিখছ কি বাল? আমি হইলাম ফর্মুলা আমি যেইটা কবো সেইটাই আইন। আমার উপর কোন ব্যাটা ঠুকতে আসবো ফাইন? ব্লাড টেস্ট কইরা মুখে মুখে বানায়া দিবো রিপোর্ট…! তাই নিয়া বাঁধবো ক্যাঁচাল! পাবলিক মাথায় তুলবো মাল…! গেঞ্জামে গেঞ্জামে পুরা জাতী পয়মাল! তখন বিভিন্ন দল আমার রিপোর্টরে দিবো সাপোর্ট…তার মানে রক্তপাত! ফোকটে আমার আব্বারা করবো এই মাটি লুট! হা হা হা…যা যা মানুষ নিয়ায়…ব্লাড টেস্ট কইরা বাট লাগাই…!

 

[আলু চলে যায়। ফর্মুলা তার সিরিঞ্জের যত্ন নিতে ব্যাস্ত হয়। দুইজন মানুষ ফর্মুলার সামনে দিয়ে কথা বলতে বলতে হেটে যায়! ফর্মুলা তাদের থামায়]

ফর্মুলা: হেই! এইদিক আসো?

দুইজন: [এগিয়ে আসে]

ফর্মুলাঃ রক্তের গ্রুপ কি?

দুইজন: (দুইজনের একজন বলবে) জানি না! ( অন্যজন বলবে) রক্তশূন্যতা গো মিয়া ভাই! দেখেন না চেহেরায় গেলেস নাই! দেখলে কেমন চুনকাম করা দেহায়, যেন সাদাকালো  জামানার সিনেমার এক্সটা!

ফর্মুলা: ( মাথা চুলকে) কি কয় ব্যাটা? রক্ত পজেটিভ-নেগেটিভ হয় শুনছি ! রক্তশূন্যতা আবার কোন গ্রুপ? আমেরিকান কোন গ্রুপ নাকি? ( হঠাৎ ধমক দিয়ে পকেট থেকে কাঁঠাল পাতা বের করে) যাহোক এইদিকে আসো? এইটা চিবাও?

দুইজন: ওইটা কি? কাঁঠাল পাতা না? আমরা কাঁঠাল পাতা চিবাব ক্যান? আমরা কি ছাগল?

ফর্মুলা: কেন শুনো নাই কবি বলেছেন,  কাঁঠাল পাতা টেস্টি… খাইতে লাগে মিষ্টি…!

দুইজন: এহ! খাবো না! আমরা আপনার হুকুমের গোলাম না।

ফর্মুলা:  ওরে হারামজাদার দল! দুইদিন পর এই দেশে আমরা হবো তোগোর বাপ! তখন তো ছাগল বানায়ে রাখবো সব কয়টারে! এখন থেইকা যদি কাঁঠাল পাতা খাওয়ার প্র্যাকটিস না করিস তাইলে হইব কেমনে? খা বলতেছি খা? (বেল্ট চাবুকের মতো করে দুইজনকে মারতে থাকে। তারা আর্তনাদ করে এবং  দৌড়ে পালায়)

[আলুর প্রবেশ আমজনতা কে নিয়ে]

ফর্মুলা: (আমজনতার চারপাশ ঘুরতে ঘুরতে) আহা আহা আহহহহহাআআআ! কি সুন্দর! বড়ই নখসাদার!এইরকম ডিজাইন দেখলে মাথা ঠিক থাকে কার? যাহোক হাত দেন গো আমজনতা ফুটা কইরা এক চিমতি রক্ত নিবো!! ঘচাত…!

আমজনতা: (আর্তনাদ) আআআআআ…!

ফর্মুলা: কষ্ট নিয়েন না কষ্ট নিয়েন না…ম্যাডাম! আসল কষ্টের দিন সামনে! যদি আমরা সফল হই তয়লে কান্নার পানি রাখার বোতল পাবেন না! (আঙুলের ডগায় এক ফোঁটা রক্ত ফেলে সেটা জিভে লাগিয়ে ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা বোঝার ভান করে ) হায় হায় আপনার রক্তে তো কিছুই  নাই! আপনে খ্রিস্টান না মুসলমান কিছুই তো বুঝতেছি না? রক্তে মনে হয় ডিস্টাব? তার উপর আবার রক্তে লিপিস্টিকের ঘ্রাণ…আইচ্ছা আপনে কোন ব্রান্ডের লিপিস্টিক ইউজ করেন?

আমজনতা: কি?

ফর্মুলা: না না ঠিক আছে যান আপনে আপাতত ওই পাসে খারান।

[জামজনতার প্রবেশ]

জামজনতা: কি বিষয়?

ফর্মুলা: আরে ঘটনা পরে আগে রক্ত দেন…(আলু হাত মুচড়ে ধরে। সিরিঞ্জ ভরে দেয়ার শব্দ)ইয়া ঢিসুম!!!

জামজনতা: (আর্তনাদ) ওরে বাপ রে রে রে গেছি রে রে রে রে…

ফর্মুলা: নাহ!! এই লোকের মইধ্যেও কিচ্ছু নাই …এই লোকের রক্তে হিন্দু নাই…বৌদ্ধ নাই কিছুই নাই! হুদাই…! খালি ধানাইপানাই…রক্তে দেহি কার্বলিক এসিডের গন্ধ পাই!!

[কাঁঠালজনতার প্রবেশ]

কাঁঠালজনতা:  কি কি…কে হুদাই? কারে কে কি বললো? আমি হইলাম কাঁঠাল জনতা। মানে যারে কয় জ্যাকফ্রুট পিউপুল…(ধমক দিয়ে) হেই এইখানে কি রঙ্গ তামসা হইতেছে?

ফর্মুলা: আরে আরে আরে…আপনে? আগে এই দিকে আসেন তো ব্রাদার…! আমজনতা, জামজনতার ব্লাড টেস্ট কইরা কিছুই পাইলাম না! দেহি আপনার ব্লাডে কিছু পাই কিনা? (কিছুক্ষণ হাত নাড়াচাড়া করে সুঁই ফুটায় ঘ্যাঁচ শব্দ করে, তারপর ঠোঁট ভেংচে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ ভাবে) হায় হায়…আপনের তো কিছুই পাই না! নেটওয়ার্ক ফেল!( আঙুলে রক্ত নিয়ে মঞ্চের এ মাথা থেকে ও মাথা শূন্যের দিকে তাকিয়ে নেটওয়ার্ক ধরার চেষ্টা করে!) হায় হায় নাস্তিক না কি? যান ওই কিনারে গিয়া খারান…আপনে তো দেখি বিরাট টেনশন…!

(সবার উদ্দেশ্যে ঝাড়ি দিয়ে বলে) হেই…! কেউ কারো সাথে মিলামিশা করবেন না, খবরদার কইলাম? আলাদা আলাদা খারান।

[আনারস জনতার কিছু আগে প্রবেশ করে চুপিচুপি ঘুরে ঘুরে ঘটনা দেখতে থাকে, হটাত তার দিকে আঙুল দিয়ে নির্দেশ করে]

ফর্মুলা:  এই যে…এই যে জনাব এইবার আপনে আসেন? বাহ আপনে তো দেখি আনারস জনতা! (আলু তাকে জাপটে ধরে। আগের স্টাইলে সুঁই ফুঁড়ে দেয়! রক্ত টেস্টের পর কোমরে হাত রেখে ঠোঁটে আঙুল চেপে ভাবতে থাকে আর বলে…) আপনের রক্ত বলতেছে আপনের বাড়ি পার্বত্য অঞ্চলে! আপনি হইলেন হাজং… না না!! আপনে হইলেন গারো… উঁহু! আপনে হইলেন সাঁওতাল… নাহ হয় নাই! ইইইইইই…মাথা নষ্ট! আপনে আপনে আপনে হইলেন ভগোবাইনে…কিংবা সাহেবধনি? নাহ! মাথা পুরা আউলা…বুজতেছিনা…কিন্তু কেন বুঝতেছি না? ( মাথা চুলকাতে চুলকাতে স্বগত) কিন্তু রক্তে তো আবার চা পাতার গন্ধ পাইলাম! সিলেটের চা নাকি দার্জিলিঙের চা সেইটাও বুঝতেছি না! কি ঘোড়ার ফর্মুলা আবিস্কার করলাম নিজেই বুঝতাছি না…!

(আলু কোন একটা শব্দে উৎকর্ণ হয়ে বেরিয়ে যায়। আনারস জনতাকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে ফর্মুলা সবার উদ্দেশ্যে) যাহোক এখন কথা হইলো এই দ্যাশ আপনাগো না! মানে হইলো এই দ্যাশ আমাগো তার মানে আমার বাপ যারা তাগো। তারা মনে করছে এই দ্যাশ আপনাগো না। তারা ঘোষণা দিছে এইখানে চলবে তাদের আইন! এই দ্যাসে থাকবে তারাই যারা এই দ্যাশের! যেহেতু আমার হিসাবে আপনাগো ব্লাডের সাথে এই দ্যাশ ম্যাচিং হইতেছে না! তার মানে এই দ্যাশ এখন আপনাগো না!!! এখন যদি জিজ্ঞাস করেন আমার বাপ কারা? উত্তর আমি দিবো না! কেননা উত্তর দেয়া নিষেধ! আর আপনারা হইলেন আমজনতা-জামজনতা-কাঁঠালজনতা আপনাদের সব কিছু শুনার নিয়ম নাই! আমরা যা যা বলবো আপনারা তাই তাই করবেন … আমরা আপনাদের নিয়া খেলব আর আপনারা পাইতা দিবেন!! হা হা হা…

[হঠাত আলু দৌড়ে আসে। সকলের উদ্দেশ্যে বলে]

আলু: হায় গো ভাই সকল জলদি আসেন… বিরাট এক্সিডেন্ট …শত শত আহত মানুষের জীবন বাচাইতে রক্ত দরকার…আপনেরা আসেন সকলে রক্ত দিয়া জীবন বাচান…

[সকলে বেরিয়ে যায় শুধু ফর্মুলা একা দাড়িয়ে থাকে]

ফর্মুলা: এহ…! এহেহেহে…এ ! সবাই লাইন দিয়া চইলা গেলো? জাত ধর্মের ঠিক নাই রক্ত দিতে গেছে? আরে বাবা আগে আমার থেইকা জাতের লাইন্সেস নে! তারপর যা!( মাথা চুলকে) অবশ্য মানুষ যদি বাইচা না থাকে তাইলে জাত-ধর্ম করবো কারা? যাহোক বেশি চিন্তা করতে নাই! চিন্তা করলে আবার সব কিছু বুইঝা ফেলব! তখন আবার গিট্টু লাইগা যাবে মাথায়!! কেননা আমার বস কইছে, খাবা দাবা কাম চালাব চিন্তা করবা কম…বেশি যদি বুইঝা ফেলাও কুইমা যাইব দম! তার মানে চিন্তা করবো তারা আর আমরা বোকা হইয়া শুধু তাগো কাম তামিল করবো! ওই যে একখান গান আছে না? আমার এই ঘাস খাওয়াতেই আনন্দ…! গাছে গাছে কাঁঠাল পাতা দেখতে লাগে সুমন্দ…!

 

[আলুর প্রবেশ]

আলু: আহ! কি কারবার হইলো! কি দেখলাম! মানুষে মানুষে এত্ত ভালোবাসা? যেইখানে হিন্দু নাই মুসলিম নাই খ্রিষ্টান নাই…! হিন্দুরে বাঁচাইতে মুসলমান রক্ত দিলো … বৌদ্ধ রে বাঁচাইতে খ্রিষ্টান…! আইজ বুঝলাম রক্তের জাত-ধর্ম থাকে না !

ফর্মুলা: (ফর্মুলা তেড়ে এসে) হেই গাধা কি কস…? কম কথা ক যা বোঝার বুঝব আমাগো বসসসস…!

আলু: ইসসসসসসস… কি আমার ব্লাড গবেষক! এতক্ষণ আমারে ছাই শিখাইছে! কইছে রক্তের নাকি হিন্দু-মুসলিম আছে…! কেউ কারো সাথে মিশব না! হায় হায়…কি অন্যায়! কিন্তু একটু আগে নিজের চক্ষে দেখলাম…রক্তের কোন জাত পাত নাই! ভিতরে মানুষ সবাই এক। তারপরে না হয় তারা নানান রঙের নানান ঢঙের!

ফর্মুলা: হেই তুই আন্ধা…তোর চোখ চীন কাগজ বান্ধা…! উপর থেইকা নির্দেশ আসছে… এই দ্যাশে মানুষে মানুষে পিরিত বেশি! সেই পিরিত ছুটানর উপায় হইলো ধর্মে ধর্মে বিভাজন!

আলু: কিন্তু তাতে লাভ কি?

ফর্মুলা: আরে গাধা তুই আমি মন্ত্রি হবো। এই দ্যাশের রাজা হবে আমার আব্বারা! আরও কত্ত কি…

আলু: কিন্তু পাবলিক? আমজনতা জামজনতা তারা কি ছাইড়া দিবো?

ফর্মুলা: আরে কিসের পাবলিক…? হেহ! তারা মুখে ঠুসি পইরা শুধু দেখব কারবার…! কেউ কিচ্ছু বলতে পারবো না,তাইলে আবার জাত নষ্ট হবে! কেননা জাতের চাবি আমাগো গোছায়…!ভুল যদি করে তাইলে দিবো ওগো পাছায়! হি হি হি…

আলু: না না আমি আপনার সাথে আর নাই! আমার আন্ধা চোখে আলো ফুটছে!

[আমজনতা প্রবেশ। ফর্মুলাকে উদ্দেশ্য করে]

আমজনতা: কই আমার রক্তের রিপোর্ট দেন,রক্তে না কি গণ্ডগোল?

ফর্মুলা: ১০০% ঝামেলা আছে আপনার ব্লাডে! রক্তে না আছে সাদা লবণ না আছে বিটলবণ…মানে  আপনে হিন্দু না মুসলিম কিছুই বুঝলাম না! সে যাই হোক রিপোর্ট বলতেছে আপনি এই দ্যাশের না!

আমজনতা: আহাহাহাহাআআ ইয়ার্কির যায়গা পান না? ইহ! কাক করে না পায়খানা…ভাব দেখায় সব জানা…! আমার তো মনে হয় ঝামেলা আপনার মাথায়…! আমরা যদি এই দেশের না হই তাইলে এই দেশের মানুষ কারা?

ফর্মুলা: (মাথা চুলকে!) হায় হায়…তাইতো? ভোদাই সাইজা গেলাম? না মাইনে যারা এই দ্যাশের! এই মাটিতে জন্মাইছে যারা তারাই এই দ্যাশের!

জামজনতা: (প্রবেশ করেই) বাহ! তাইলে তো কাহিনী শেষ! আমরাই এই দেশে জন্মাইছি … দেশ আমাদের!

ফর্মুলা: (রেগে গিয়া)আরে ধুত্তুতি মিয়া আপনে ধর্মের কি বুঝেন? আমরা যেইটা কবো সেইটাই ঠিক! থুক্কু কি কইলাম মানে মানে মানে…তারা আমারে যা কইতে কইছে, আমি তাই কইলাম। আর আপনের মইধ্যেও ঝামেলা আছে? আপনে বেশি বুঝেন…

কাঁঠালজনতা: (প্রবেশ করেই) ওই গাধা রক্ত দিয়া ধর্ম বোঝে কেমনে? পাবলিকরে কি ছাগু পাইছোস যে উল্টাপাল্টা যায়গায় হাগু করবো?

ফর্মুলা: এহ! চান্দে যদি মানুষ দেহা যায়… তয়লে মানুষের রক্তেও ধর্ম পাওয়া যায়! আর হাগুর কথা বলবেন না! আমার আবার আমাশয়ের দোষ!

আনারসজনতা: তার মানে কি দাঁড়াইল?

ফর্মুলা: ঘটনা দাঁড়াইল তাল গাছটা আমার…আমাগো রক্ত হইলো শ্রেষ্ঠ… তাই এই দুনিয়ায় আমরাই থাকবো! বুঝছেন…?

আনারসজনতা: আপনের মায়ের কাছে আপনে শ্রেষ্ঠ না কি আপনার ছোট ভাই শ্রেষ্ঠ?

ফর্মুলা:  এহ! ক্যান দুইজনই সমান?

কাঁঠালজনতা: তাইলে কি হইলো? তার মানে এই মাটিতে আপনিও যেমন আমিও তেমন, সবাই সমান! যান কাহিনী শেষ জয় বাংলাদেশ…!

ফর্মুলা: অইটেই তো সমস্যা, বড় বস কইছে… আপনারা আম-জাম-কাঁঠালজনতা যদি পাশাপাশি একসাথে থাকেন… তাইলে তো আর তাগো লাভ নাই! হায় হায়… সর্বনাশ আমি পেটের কথা সব বইলা ফেলছি! কি করবো আমাশয়ের রোগী…একটু চাপ পড়লেই গইলা যায়! আমি তাইলে যাই…কেমুন? আমাশয়ের ডাক পড়ছে!

আলু: দাঁড়ান? আপনের পালাবার কায়দা নাই? আপনের মতো মানুষেরা এই মাটির সহজসরল মানুষের মইধ্যে বাট লাগাইতেছে! মানুষের অন্তরে বিষ ঢাইলা দিতেছে। এই দেশে হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই…আপনারা খালি গেঞ্জাম লাগাবার চেষ্টা করেন। ফোকটে ব্রেকিং বাম্বুতে মানে ফাটা বাঁশে জিনিস আটকায় আমাগো!

ফর্মুলা: (খেপে গিয়ে) ওই ওই তুই নাস্তিক তুই নরকের কিট…তুই…তুই…

আলু: আহাআআ…কথায় না পারলেই নাস্তিক? আপনার হাতে আস্তিক-নাস্তিক বলবার চাবি দিছে কে? আমার ধর্ম তো আমি আপনার হাতে দেই নাই! দাঁড়ান এইবার আপনার ব্লাড টেস্ট করা হবে আপনারই ফর্মুলায়!(সিরিঞ্জ কেড়ে নিয়ে) ঘ্যাচাত! হায় হায়… কি বিষয়? (সবাই এগিয়ে আসে) আপনের রক্তে দেহি চিনির প্রবলেম ! তার মানে ডায়েবেটিস? মুতের সাথে দর্শনা সুগার মিল যাইতেছে দেহি!! হায় হায় তাইলে আপনের জাত কোনটা?

আমজনতা: এই মাটির মানুষেরা হাজার বছর বিভিন্ন বিশ্বাস নিয়ে পাশাপাশি থাকছে …

জামজনতা: মুসলমানের যিনি সত্যপীর হিন্দুর তিনিই সত্য নারায়ণ…কই কোন সমস্যা তো কখনো হয় নাই…কারো জাত ধর্ম তো নষ্ট হয় নাই…!

আমজনতা: ধর্ম নিয়ে যত গেঞ্জাম-সহিংসতা সব আপনারাই তৈরি করেন…আর বলি হই আমরা সাধারণ মানুষেরা…

কাঁঠালজনতা: আজ তাইলে ঝামেলা কিসের? যারা মানুষের রক্তে বিভাজন চায় তাদের কি করা যায়?

আনারসজনতা: তাদের আলাদা করা হোক! যারা আমাদের সম্প্রিতিকে নষ্ট করে কই তারা?

আলু: (লাফ দিয়ে) হেই গো হেই…সেই লোক এই!! আসেন ব্রদার সকলে এই রক্ত চোষার পুঙ্গিতে আগুন দেই! তাইলে দেখবেন ছুছা বাজির মত দৌড়ানি দিবো এই মাটি ছাইরা…আসেন আসেন সব্বাই…

 

[ঢোলের তালে কবিতার সঙ্গে ফর্মুলাকে ঘিরে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে সকলে]

যারা আজ আমার মাঠে দিতে চায় বিভেদ তুলে

যারা আজ ফুলের কথা ঢেকে দেয় বিষ মাখিয়ে?

এসো আজ তাদের ছায়া মুছে দেই মাটির থেকে

যারা আজ রক্ত বুকে বুনে দেয় বিষের চারা!

এসো আজ হিন্দু,গারো,মুসলিম,বৌদ্ধ,কোল,

এসো আজ হাজং,ম্রো এসো প্রভু যীশুর যারা;

বুক বেঁধে দাড়াই আজ কথা কই মাটির সুরে

এ মাটির মানুষ যারা হাতে হাত বাধুক জোট

পৃথিবীর মানুষ যারা হাত ধরে বন্ধু হোক।।

রচনাকাল: ২৯ এপ্রিল ২০১৩

[ ব্লাড টেস্ট  নাটকটি মঞ্চায়নের ইতিহাস: ‘উদীচী খুলনা জেলা সংসদ’ কর্তৃক প্রথম মঞ্চায়ন উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী, ২২ জুন ২০১৩। এছাড়া ‘উদীচী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’, সিলেটের ‘থিয়েটার মুরারীচাঁদ’ মঞ্চস্থ করেছে। বর্তমানে ভারতের ‘কলকাতা নাটকওয়ালা’ মঞ্চস্থ করছে নাটকটি। ]

 

তারিখ: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫

প্রকাশক: সাবিহা হক, অধ্যাপক, ইংরেজি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ

all rights reserved by - Publisher

Site By-iconAstuteHorse