প্রতিশোধ
নাদিয়া মাহজাবিন
“আইজকাইল সন্ধ্যা হইতে না হইতেই চাইরদিক আন্ধাইর হইয়া যায়। কাসেম মাঝির মাইয়া আমেনা একটু পরেই এই নদীর পাড় দিয়া বাড়িত যাইবো। যা করার আইজকাই করতে হইবো। গত দুইদিন চান্নি রাইতের লাইগ্গা সুযোগটা পাই নাই। ওর বাপের অতো বড়ো সাহস মাইয়ারে আমার লগে বিয়া দিবার চায়না। উল্টা গেরামে দরবার বসাইয়া আমারে শাসন করে। কয় মাইয়ারে নাকি শহরে পাডাইবো লেহাপড়া করাইতে! ওর পরালেহা বাইর করমু আইজকা। হেইবার আমার হাত থাইক্কা কালুর মাইয়া ছুটতে পারে নাই আর ও কি এমন চিজ। আসুক খালি আইজকা, এমন কাম করমু মাইয়ার লগে….
নদীর ধারে জঙ্গলের বড়ো গাছটার পিছনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে কথাগুলো বলছে রুস্তম শেখ।
হঠাৎ আবছা আলোয় দেখা গেলো কে যেনো আসছে। মাস্টার বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়ে এখন আমেনারই আসার সময়। রুস্তম শেখ গাছের আড়াল থেকে প্রস্তুতি নিতে লাগলো কিভাবে আমেনাকে জব্দ করে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। প্রথমে গামছা দিয়ে মুখ চেপে ধরলেই সুবিধা হবে। পরে শুধু টেনে জঙ্গলের ভেতর নিতে পারলেই হলো…
এইতো গাছটার কাছে এসে গেছে আমেনা।
রুস্তম শেখ এবার লম্বা পা ফেলে সামনে আগাতে লাগলো। এক পা, দুই পা করে আগাচ্ছে সে। চারদিক শুনশান। এতদিনের ইচ্ছা আজ পূরণ হতে চলছে, আনন্দে তার চোখ দুটি ছলছল করছে। কিন্তু হঠাৎ তার সামনের পা টি একটি গর্তে ঢুকে গেলো। গর্তটা কিসের সে অনুমান করতে পারছে না। ভাবলো ইঁদুরের হবে হয়তো। কিন্তু না! এরপর ওর মনে হচ্ছে পা টা যেনো নিচের দিকেই নামছে শুধু। বারবার চেষ্টা করার পরও টেনে বের করতে পারছে না। অথচ অন্ধকারে কিছু দেখতেও পারছে না। একসময় মনে হলো, কি একটা যেনো তার পায়ে প্যাঁচ দিয়ে ধরেছে। এবার তার মনটা খচখচ করতে লাগলো।
রুস্তম শেখ ভাবলো একবার চিৎকার করে কাউকে ডাকবে। কিন্তু এই জঙ্গলের ধারে কে শুনবে তার ডাক!
ততক্ষণে আমেনা জঙ্গলের রাস্তা পার হয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। রুস্তম শেখ এবার আর পায়ের ব্যথা সহ্য করতে না পেরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করলো। কিন্তু আশে পাশে কেউ নেই যে শুনবে তার চিৎকার।
সকালবেলা নদীর পাড়ে রুস্তম শেখের লাশ পাওয়া গেলো। পায়ের ক্ষতস্থানে দুটি দাঁতের স্পষ্ট দাগ!
তারিখ: নভেম্বর ৯, ২০২১



AstuteHorse