ইডিএস, এক স্বপ্নের নাম
মোঃ শাহীন হোসেন
পৃথিবীতে এ যাবৎ এসেছে অগনিত মানুষ। যে যার মতো জীবনযাপন করে চলেছে। মনে কি রেখেছি তাদের সবাইকে? রাখতে কি পেরেছি ? আসলে সবাইকে মনে রাখা সম্ভব নয়, তবে হাতে গুনে যাদের নাম আজও লোকমুখে ভাসে তাদের বেশীরভাগ কাজ মানুষের জন্য। একটা ছোট ডানপিঠে ছেলে সারাদিন খেলাধুলা করে, বনে বাদাড়ে ছুটে বেড়ায়। খেলার সাথীদের তিন বেলা খেতে না পারা অথবা একসাথে বিদ্যালয়ে না যাওয়া দাগ কাটে সেই ছোট্ট ছেলেটির মনে। জীবন যে দেখেছে চর্মচক্ষু ছাড়িয়ে মনের চোখ দিয়ে তার মনুষ্যবোধ জাগবে এটাই স্বাভাবিক। শত কষ্ট হলেও সে জীবনে ভালো কিছু করে এইসব অঙ্কুরে বিনষ্ট হওয়া ফুলদের নিয়ে কাজ করবে তা শপথ করেই নিয়েছিলো। স্বপ্ন যার চোখ জুড়ে তাকে কে দামিয়ে রাখে!
একে একে মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে এডমিশন নিলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবার যেন স্বপ্ন হাতে ধরা দেয়। মন থেকে কিছু চাইলে সৃষ্টিকর্তা নাকি তা পুরন করে দেন। স্বসম্মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায় শেষ করে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালো সুদূর প্রবাসে। এখনকার উন্নত জীবন পেয়ে স্বাভাবিকভাবে আপনি ভূলে যাবেন তিক্ত অতীত, কিন্তু যার কিনা মন পড়ে আছে সেই কাদামাটি ভেজা গ্রামে, তাকে কি আর প্রবাসের চাকচিক্য ছুঁতে পারে!
বলছিলাম ড. হাফিজুর রহমানের কথা। তার হাত ধরে স্বপ্নগোনা সকলে যাত্রা শুরু করে নতুন ভাবে। তিনি তাঁর নিজের বোনের ছেলে আলামিন এর সাথে আলোচনা করেন যে, এলাকায় যারা শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা। শুরু করলেন ইডিএস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। স্বপ্ন আকাশচুম্বি। এলাকার সব শিক্ষাবঞ্চিত ছেলেমেয়ে শিখবে তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে।
কিন্তু পথটা তো মসৃণ না। অনেকের কটুক্তি পেরিয়ে ছোট্ট একটা ঘরে শিক্ষা প্রদানের কাজ শুরু করে আলামিন। বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ করে দেয় এলাকার শিক্ষার্থীদের। নিজ এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার শিক্ষার্থীর ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় ইডিএস। এর মধ্যে চাকরি পেয়ে যায় হাফিজুর রহমান। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার প্রবল আবেগে সেদিন চোখের কোণে জ্বল জ্বল করে উঠেছিলো হাফিজের। সে কান্না দুঃখের নাকি আনন্দের উত্তর মেলেনা।
দেশে এসে যখন প্রথমবার তিনি নিজের প্রতিষ্ঠান দেখেন তখন বলেছিলেন, “ইডিএস আমার সন্তানের মতো”। সন্তানের মতোই বেড়ে উঠতে থাকে ইডিএস। তৈরী করে কয়েকটি শাখা। অনেক শিক্ষার্থীই জীবন গড়েছে এই ইডিএস থেকে। বুক জুড়ে অদম্য সাহস সঞ্চার হয় তাদের। এখানকারই এক শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে। যে হয়তো ভাবতো তার বাবার মত তাকেও একদিন দিনমজুরী করতে হবে। ইরফান ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী যে কিনা অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা ভার বহন আর বৃদ্ধ বাবার কষ্টের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চিপে লড়ে গেছে, সেদিন খবর আসলো সে এক সরকারি ব্যাংক এর অফিসার। এস এস সি পরীক্ষার পরে যে ছেলের লেখাপড়ার পাট উঠে যাবার উপক্রম হয়েছিল তার মনেও আশা জাগিয়েছিল ইডিএস। কলেজে পড়ার সময় কাজ করত ডাক্তারের চেম্বারে, কিন্তু পড়াশুনা তো তাকে করতেই হবে; তাই ইডিএস তাকে ব্যবস্থা করে দিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দ্বারা শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ। ছেলেটির পরিচয় এখন মোঃ শাহিন হোসেন বিএসসি ইন এগ্রিকালচার।
এখন এলাকার যে ছেলে তিন বেলা খেতে পারতনা, সেই ছেলেটিও হতে চায় প্রকৌশলী। প্রথম দিকের অনেক শিক্ষার্থীই এখন গাড়ী হাকিয়ে এসে থামে ইডিএস এর সামনে। সুদূর প্রবাস থেকে মানসিক বল দিয়ে যাচ্ছেন হাফিজুর রহমান, দিয়ে যাচ্ছেন লড়ে যাওয়ার রসদ। এই ধরুন মুন্নার কথা; তরুন বেপরোয়া মুন্না মারামারি করে দিন কাটত যার, সে-ই এখন টাই- স্যুট পরে কলেজে যায়। এই পরিবর্তনের নেপথ্য-নায়ক সেই ছোট্ট বালকটি, হাফিজুর রহমান। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ সেই ছোট্ট ছেলেটির সাথে সাথে অদম্য গতিতে ছুটে চলেছে ইডিএস। যাত্রা শুরুর পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের সাহচর্যে আসেনি এমন অল্পবয়স্ক শিক্ষার্থী আশেপাশে পাওয়া যাবে না।
শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রে নয়; এলাকায় হতে যাওয়া অনেক বাল্য বিবাহ আটকে দিয়েছে হাফিজুর রহমান এবং তার প্রতিষ্ঠান। স্বপ্ন দেখিয়েছে ঐ সকল মেয়েদের। শুধু স্বপ্ন দেখে ক্ষান্ত না থেকে অন্ধকারে প্রায় নিমজ্জিত হওয়া কিশোরকে দিয়েছে আলো ঝলমলে ভবিষ্যতের দিশা। তারা সেই দিনের কথাগুলো বলতে গেলে আজও মনের অজান্তে চোখ জলে ভিজিয়ে ফেলে। দূর প্রবাসে থেকেও হাফিজুর রহমান তাদের সর্বক্ষন খোঁজ খবর নেন। একটি ছেলে বা মেয়ে শিক্ষা গ্রহনের জন্য তাকে অনুপ্রেরনা দেওয়া বা তাকে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া ছাড়াও তাকে স্বাবলম্বী করতে যা যা করার ইডিএস গত ১৫ টি বছর ধরে তা একান্তে করে আসছে।
অপুর্ব সুগন্ধে পরিপূর্ণ হাস্নাহেনার গন্ধ যেমন ইচ্ছা করলেও লুকিয়ে রাখা সম্ভব না, ঠিক তেমনি এই কাজ তেপান্তর পেরিয়ে পা বাড়াচ্ছে বিশ্ব অভিমুখে। ২০০৫ সালে একটি ছোট্ট ঘরে শুরু হওয়া স্বপ্ন আজ নিজেই স্বপ্ন দেখাচ্ছে হাজারো শিক্ষার্থীকে। কেউ স্বপ্নের পথে হাঁটছে আবার কেউ পথ পেরিয়ে দিগন্ত পাখা মেলে বাঁচতে শিখে গেছে। প্রথমদিকে গোলপাতার ছাউনি দেয়া ঘরের ব্যবস্থা হয়েছিলো। হাফিজুর রহমান তখনও আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি। তবুও যে স্বপ্ন লালন করেছেন তাকে বাস্তবরুপ দিতে স্বল্প আয় নিয়েই গোলপাতার ঘরেই চলতে থাকে ইডিএস এর কার্যক্রম। যখন ইডিএস এর শুরুর দিকের স্বেচ্ছাসেবকরা (যার মধ্যে আল-আমিন অন্যতম) এলাকার পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার কথা জানাত, তাদের অভিভাবকরা বলতেন, “কিসের পড়াশুনা? আমি ভ্যান চালাইছি আমার পোলাও ভ্যান চালাইব। ওসব পড়াশুনা আমাগো দিয়া হইবনা”। সেই ভ্যান চালকের ছেলে আজ প্রাইভেট কার কেনার দ্বারপ্রান্তে। অভিভাবককে বুঝিয়ে সেইদিন তার ছেলেকে ইডিএস এ নিয়ে না আসলে হয়ত সেই ছেলে এখন তার মতই ভ্যান চালাত। সেই অভিভাবককে যদি সেইদিন এর কথা জিজ্ঞাস করা হয়, প্রশান্তির হাসি দিয়ে বলেন, “তোমরা সেইদিন ওরে নিয়া গেছিলা বইলে আইজ এই দিন দেখলাম”। এতোটুকুই পাওয়া ইডিএস এবং এর পিছনে কাজ করা মানুষগুলোর। বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে দিয়ে ইডিএস যে অভিভাবকের চোখের কাঁটা বনে গেছিলো সেই অভিভাবকই আজ মেয়ের সাফল্য দেখে আনন্দে আত্মহারা।
ভালো কাজে ভালো মানুষের অভাব হয় না। ঠিক তেমনই হাফিজুর রহমান পেয়ে গেলেন নিজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রৌকশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- এর এক ঝাঁক শিক্ষার্থীকে। তারা তাদের সবটুকু দিয়ে চেয়েছে হাফিজ অথাবা তার সন্তানতুল্য প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন পূরণ হোক। সমাজে ভালো-মন্দ মানুষ আছে। আয়নার অপর পিঠে কিছু লোক হাফিজুর রহমানের এই ভালো কাজ সহ্য করতে পারেনি। তারা নানাভাবে ইডিএস এর কার্যক্রম ব্যাহত করতে চেয়েছে। যদি মূল শক্ত থাকে তবে গাছ যেমন নড়ানো যায়না, ঠিক তেমন শক্ত হাতে হাফিজুর রহমানের ধরা হাল তারা টলাতে পারেনি। সময়ের সাথে সাথে নতুন হয়েছে ইডিএস এর কাঠামো। পার্শ্ববর্তী পাটকল এলাকার অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সংবাদটা শুনে হাফিজুর রহমান গুটিকয়েক স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে শুরু করলেন ইডিএস এজ্যাক্স জুট মিল শাখা এবং ইডিএস সোনালি জুট মিল শাখা।
সময়ের সাথে সাথে ইডিএস চলতে থাকে বিরামহীন গতিতে। হাফিজুর রহমান একদিন ভাবলেন, তিনি না থাকলে ইডিএস এর কি হবে? তবে কি মুছে যাবে ইডিএস নামটি? তা হয় কিভাবে? জীবনের কষ্ট, ঘাম এক করে তিলে তিলে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান আর থাকবে না, তা হয় কিভাবে? তবে বাস্তব তো মেনে নিতেই হবে, তিনি না থাকলে এই সংগঠন কিভাবে চলবে, তার আয়ে যেমন প্রতিষ্ঠান চলতো কেউ কি এইরকম ভাবে নিজের আয়ে প্রতিষ্ঠান চালাবে? তার পরে এতে আবার কোন লভ্যাংশ বা আয়ের উৎস নেই। গত কয়েক বছর ধরে তিনি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেয়েছেন, আপন মনে সমাধান খুঁজেছেন। অবশেষে তিনি ভাবলেন ইডিএস তো রাষ্ট্র-লিপিবদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান হতে পারে, যার থাকবে একটি পরিচালনা পরিষদ। তাতে বাকীটা পথ চলবে। সদস্য পরিবর্তন হবে এবং নতুনদের হাত ধরে চলবে ইডিএস। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো এইরকম মানুষ কোথায় পাবেন। খুঁজতে থাকেন হাফিজ। উদ্দেশ্য সৎ এবং কর্মপ্রচেষ্টা নিরেট থাকলে সব সম্ভব।
এভাবে খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলেন এক ঝাক আত্মপ্রত্যয়ী এবং বিশাল মনের কিছু মানুষ। তাঁরা এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে খুশিই হলেন। শুরু হলো নতুন অধ্যায়, নতুন সম্ভাবনা। ২০০৫ সালে ছোট্ট কুঁড়েঘরে গড়ে ওঠা সেই ইডিএস এখন রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত প্রতিষ্ঠান। একঝাঁক স্বপ্নবাজ মানুষ সাথে নিয়ে চলেছে ইডিএস। এটা যদিও সহজ কাজ নয়, কারণ আপনার ভালো কাজকে সবাই ভালবাসবে, আপনাকে অনুপ্রাণিতও করবে, কিন্তু অনেকক্ষেত্রে সময় ও সুযগের অভাবে ইচ্ছা থাকলেও অংশীদার হওয়া যায় না ভালো কাজে। তবে যারা সময় বের করে সময়ের বাধা ভেঙে ভালো কাজে আসতে পারেন, তারাই যুগে যুগে সাধারন মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। ইডিএস- এর সাথে থাকা সদস্য এবং হাফিজুর রহমানের সম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তে সবাই উপনীত হয় যে, ইডিএস এখন আর হাফিজুর রহমান বা অন্য কারো অর্থ-সাহায্যে চলবে না। এখানে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা আয়করী কাজে জড়িত থেকে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ নিজেরা যোগাবে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব তরুণকে দেশ ও সমাজের জন্য দক্ষ জনশক্তি হিসাবে রূপান্তর করা প্রয়োজন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণত সবাই শিক্ষা গ্রহনের জন্য যায়, কিন্তু ইডিএস ঐ সকল শিক্ষার্থীকে নিয়ে কাজ করে আসছে এবং করবে যারা শিক্ষার ব্যয় বহনে ব্যর্থ। ইডিএস ঐ সকল শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াবে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে একজন শিক্ষার্থী একটা পর্যায়ের পরে নির্দিষ্ট গ্রেডে শিক্ষিত হয় এবং উপযুক্ত সনদ পায়, কিন্তু একই স্তরের ইডিএস এর শিক্ষার্থী উপযুক্ত সনদের পাশাপাশি হয়ে উঠবে দক্ষ জনশক্তি। এরই অংশ হিসাবে ইডিএস পরিচালনা করছে পোল্ট্রি ফার্ম। কোন একদিন সকালে আপনি ইডিএস প্রাঙ্গণে আসলে দেখতে পাবেন একদল শিক্ষার্থী খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পোল্ট্রি ফার্মের দিকে ছুটে যাচ্ছে, ডিম সংগ্রহ করে বাজারে সেগুলো বিক্রি করছে, আবার নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছে। এরকম যুদ্ধ করে যে, সাফল্য তার প্রাপ্য।
ইডিএস সম্প্রতি শুরু করেছে মশলার ব্যবসা যেখানে ক্ষেত থেকে মশলা সংগ্রহ করে স্বেচ্ছাসেবকদের তত্ত্বাবধানে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। স্বেচ্ছাসেবকদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইডিএস এর উদ্যোগে প্রযুক্তিগত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে পৃথক আইসিটি শাখা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের দক্ষ প্রশিক্ষকগণের সংস্পর্শে এসে এখানকার সেচ্ছাসেবকরা তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে দক্ষ হয়ে উঠছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ইডিএস এর স্বেচ্ছাসেবকদের কথা বলা বা ক্লাস করা এখন নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা, যার ফলে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছে। তাদের ইংরেজি ভাষায় ভীতি ছিল; তা কাটিয়ে উঠে সহজ সাবলিল ভাবে কথা বলছে বিদেশী যেকোনো শিক্ষার্থীর সাথে।
একজন শিক্ষার্থী যখন নিজের আয় করা টাকায় নিজের পড়াশুনার খরচ চালাবে তখন তার মধ্যে স্বপ্ন ছোঁয়ার যে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে তা দিয়ে জয় করা যাবে এভারেস্ট সমান বাধা। ইডিএস এই সকল শিক্ষার্থীকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে যারা হয়তো ভেবে রেখেছিল যে বাবার রেখে যাওয়া ভ্যানগাড়িটা মনে হয় তার বংশীয় পেশা হিসাবে ধরে রাখতে হবে। ইডিএস নামক পরশপাথরের ছোঁয়ায় আজ সে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরের চাল বেয়ে পানি পড়ে বিছানাপত্র, বইখাতা ভিজে যাওয়া রাতগুলোর দুঃসহ স্মৃতি পেরিয়ে আজ তারা উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখে। ইডিএস নিজে স্বপ্ন দেখে এবং এদের স্বপ্ন দেখায় , ইডিএস স্বেচ্ছাসেবকরা এখন বৈশ্বিক উন্নয়নের স্রোতে গা এলিয়ে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখে তারাও চায় তথ্য প্রযুক্তি খাতে নিজেকে এগিয়ে নিতে। প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের দক্ষ করে গড়ে তোলার কাজ চলছে। মশলা ব্যাবসা করে আয়কৃত অর্থে চলবে তাদের পড়াশুনা, নিজে কাজ করে অর্থ আয় করে সেই অর্থে নিজের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে এক একজন স্বেচ্ছাসেবক সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠেছে এক একজন যোদ্ধা।
ইডিএস এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের একান্ত প্রচেষ্টায় ইডিএস দুর্বার। এ যেন উসাইন বল্টের দৌড়ের মত ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে চলা। চলছে স্বপ্ন দেখানোর ও বাস্তবায়নের মহোৎসব। ভালো কাজ হয় আমাদের চারপাশে, কিন্তু আপনি তার সাথে কতোখানি জড়িত ভাবুন। আর তা যদি টাকা পয়সা না এনে দেয় তাহলে তো আগ্রহ আরও কমে যায়। এ যেন নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত। তবে মোষগুলি যদি বন থেকে এনে খামারে প্রতিপালন করে নিজের ও সমাজের জন্য সুখকর করতে পারবেন তবে ক্ষতি কি? ইডিএস এর সাথে থাকা প্রতিটি মানুষ এক একজন ভিন্ন ভিন্ন আকাশের তারা, যাদের সম্মিলিত আলোতে ইডিএস আলোকিত হচ্ছে, নিজেকে অন্যদের থেকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে দিনের পর দিন।
তারিখ: নভেম্বর ২১, ২০২৩



AstuteHorse